শিরক শব্দের অর্থ অংশীদার সাব্যস্ত করা, সমকক্ষ মনে করা ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কিছুকে অংশীদার সাব্যস্ত করাকে শিরক বলে। অপর কোনো কিছুকে আল্লাহ তায়ালার সমতুল্য বা সমকক্ষ বলে বিশ্বাস করাও শিরক। যে ব্যক্তি শিরক করে, তাকে বলা হয় মুশরিক ( مُشْرِك ) ।
তাওহিদের বিপরীত হলো শিরক। তাওহিদ হলো একত্ববাদ। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়-এরূপ বিশ্বাসকে তাওহিদ বলে। পক্ষান্তরে, শিরক হলো আল্লাহ তায়ালার সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। কিংবা কাউকে আল্লাহর সমপর্যায়ের মনে করা। শিরক প্রধানত তিন প্রকার। যথা:
ক. আল্লাহ তায়ালার সত্তার সাথে শিরক করা। যেমন- আল্লাহ তায়ালার পিতা, পুত্র কিংবা সত্রী আছে-এরূপ বিশ্বাস রাখা।
খ. আল্লাহ তায়ালার গুণাবলিতে অংশীদার সাব্যস্ত করা। যেমন- সৃষ্টিকর্তা একজন না মেনে একাধিক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করা। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সৃষ্টি, জীবিকা, জীবন, মৃত্যু ইত্যাদির মালিক মনে করা।
গ. আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে শিরক করা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য ইবাদত না করে অন্য কারো ইবাদত করা। যেমন-অগ্নিপূজা ও মূর্তিপূজা করা।
শিরকের কুফল ও পরিণতি
আল্লাহ তায়ালার নিকট সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ হচ্ছে শিরক। পৃথিবীতে যত প্রকার যুলুম আছে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় জুলুম বা পাপ। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
إِنَّ الشَّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ .
অর্থ: "নিশ্চয়ই শিরক চরম যুলুম।" (সূরা লুকমান, আয়াত ১৩)
শিরকের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্যায় আচরণ করে। কেননা আল্লাহ তায়ালাই মানুষের একমাত্র স্রষ্টা। সকল ইবাদত ও প্রশংসা লাভের হকদারও তিনিই। শিরকের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদত করে। ফলে আল্লাহর সাথে চরম অন্যায় করা হয়।
অন্যদিকে শিরক মানুষের মর্যাদাহানিকর কর্মও বটে। কেননা মানুষ হলো সৃষ্টির সেরা জীব বা আশরাফুল মাখলুকাত। আল্লাহ তায়ালা সবকিছু মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন। অথচ মুশরিকরা শিরকে লিপ্ত হয়ে অন্য সৃষ্টির কাছে মাথা নত করে। ফলে মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। এজন্যই কুরআন মজিদে শিরককে সবচেয়ে বড় যুলুম বলা হয়েছে।
শিরকের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহ তায়ালা শিরকের অপরাধ ক্ষমা করেন না। তিনি বলেন:
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ .
অর্থ: "নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে শিরক করার অপরাধ ক্ষমা করেন না। তা ব্যতীত অন্য যেকোনো পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন।" (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১১৬)
আমরা শিরক ও এর কুফল সম্পর্কে ভালোভাবে জানব এবং সর্বদা এ জঘন্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকব। আমাদের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজনদেরকে শিরকের কুফল ও শোচনীয় পরিণতির কথা বলে সতর্ক করব।
দলগত কাজ : কী কী কাজে শিরক হয় তার একটি তালিকা প্রস্তুত করে প্রদর্শন কর। |
বাড়ির কাজ : শিরক পরিহার করার উপায়সমূহ বর্ণনা কর। |
Read more